পেঁয়াজ উৎপাদন নিয়ে কৃষকের লোকসানের শঙ্কা

স্টাফ রির্পোট: পেঁয়াজ উৎপাদন নিয়ে কৃষকের লোকসানের শঙ্কা বাড়ছে। মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের ফলন চলতি বছর ভালো হলেও কৃষক আশানুরূপ দাম পায়নি। তারপর কৃষকের ভরসা ছিলো হালি পেঁয়াজ। কিন্তু সমপ্রতি মাঠে মাঠে পেঁয়াজের খেতে আগা মরা রোগ দেখা দেয়ায় ফলন বিপর্যয় ও বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত পেঁয়াজের ফলন মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ার শঙ্কায় ভুগছেন কৃষকরা। কৃষক এবং কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দুটি পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষ হয়। একটি হলো মুড়িকাটা ও অপরটি হলো হালি পদ্ধতি। মুড়িকাটা পদ্ধতিতে অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে পেঁয়াজ আবাদ করা হয় এবং জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ওই পেঁয়াজ ঘরে তোলা হয়। আর হালি পদ্ধতিতে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে পেঁয়াজের আবাদ করা হয় এবং মার্চ-এপ্রিলে ঘরে তোলা হয়। সাধারণত হালি পদ্ধতিতেই সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজের আবাদ হয়। কিন্তু এ বছর হালি পদ্ধতিতে আবাদ করা পেঁয়াজের খেতে আগা মরা রোগ দেখা দিয়েছে। আর মুড়িকাটা পেঁয়াজ কম দামে বিক্রি করে কৃষকরা এবার ব্যাপক লোকসান গুনেছে। এখন হিসেবে হালি পেঁয়াজের আগা মরা রোগ এসেছে। পেঁয়াজগাছের আগা শুকিয়ে যাওয়ার জন্য কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্টরা আবহাওয়াকে দায়ী করছে।

সূত্র জানায়, দেশের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনকারী উপজেলা হলো পাবনার সুজানগর। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সাঁথিয়া উপজেলা। এবার সুজানগরে ১৯ হাজার ২৮০ হেক্টর, সাঁথিয়ায় ১৬ হাজার ৭০০ হেক্টর ও বেড়ায় ৫ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। ১০-১২ দিন ধরে তিন উপজেলায় হালি জাতের পেঁয়াজ বাজারে উঠছে। তবে এবার মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের ফলন ভালো হলেও দাম কম থাকায় কৃষকের লোকসান হয়েছে। আশা করা হচ্ছিলো হালি পেঁয়াজের হয়তো ভালো দাম মিলবে। কিন্তু হালি পেঁয়াজেরও ভালো দাম মিলছে না। বরং পেঁয়াজখেতগুলো আগা মরা রোগে আক্রান্ত হওয়ায় পেঁয়াজের গুটি খুব একটা বড় হয়নি। এ অবস্থায় ফলন কমে যেতে পারে।

সূত্র আরো জানায়, মুড়িকাটা পেঁয়াজে এবার প্রতি কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা উৎপাদন খরচ হয়েছে। আর হালি পেঁয়াজে ওই খরচ পড়েছে প্রায় ৪৫ টাকা। যদিও স্থানীয় কৃষি কার্যালয়ের তথ্যমতে মুড়িকাটা ও হালি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ পড়েছে যথাক্রমে ৪১ ও ৩৮ টাকা। তবে পাইকারি বাজারে মাত্র ১৩ থেকে ১৮ টাকা কেজি দরে মুড়িকাটা পেঁয়াজ এবং ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে হালি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ফলে প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা কৃষকের লোকসান হচ্ছে। আর আগা মরা রোগে হালি পেঁয়াজের ফলন কমে গেলে কৃষকের লোকসান আরো বাড়বে। বর্তমানে বেশির ভাগ খেতের পেঁয়াজগাছগুলোর মাথা শুকিয়ে লালচে রং ধারণ করেছে। কোনো কোনো জমির পেঁয়াজগাছ প্রায় অর্ধেক শুকিয়ে গেছে। পেঁয়াজের আকারও বেশ ছোট হয়েছে। আবাদের শুরুতে খেতে কোনো সমস্যা না থাকলেও গাছ বড় হতেই এর মাথা মরে যেতে শুরু করেছে।

এদিকে কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্টদের মতে, দিনে ভ্যাপসা গরম পড়ছে আর রাতে শীত; আবার ভোরে কুয়াশাও দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থায় দিন ও রাতের তাপমাত্রার তারতম্য ১০ ডিগ্রি পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে। মূলত এ কারণেই হালি পেঁয়াজগাছে এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে ইতিমধ্যেই পেঁয়াজের গুটি মোটামুটি বড় হয়ে গেছে। আর মাসখানেকের মধ্যেই পেঁয়াজের অনেকটাই উঠে যাবে। আর গাছের আগা শুকিয়ে যাওয়া রোধের জন্য কৃষকদের পরিমিত পরিমাণে রাসায়নিক কীটনাশক ছিটানোর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

নিউজটি আপনার স্যোসাল নেটওয়ার্কে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *