সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা তাদের দাবি আদায়ে দ্বিতীয় দিনের মতো পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছেন। মঙ্গলবার (২৭ মে) বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি এবং সহকারী শিক্ষক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানান।
সহকারী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরেই বেতন কাঠামো সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ৫ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত এক ঘণ্টার, ১৬ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত দুই ঘণ্টার এবং ২১ মে থেকে ২৫ মে পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন তারা। এরপর সোমবার (২৬ মে) থেকে শুরু হয় লাগাতার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি, যা মঙ্গলবার (২৭ মে) দ্বিতীয় দিনে গড়ায়। এতে দেশের ৬৫ হাজার ৫৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
সহকারী শিক্ষকরা মূলত তিনটি দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন:
১. কনসালটেশন কমিটির সুপারিশ সংশোধন করে সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ হিসেবে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ।
২. চাকরিতে ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা দূর করা।
৩. প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করা এবং দ্রুত পদোন্নতি প্রদান।
বর্তমানে সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। শিক্ষকরা মনে করছেন, এই বেতন কাঠামো তাদের মর্যাদা ও জীবনের মানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। যদিও সরকার ১২তম গ্রেডে নিয়োগ এবং চার বছর পর ১১তম গ্রেডে পদোন্নতির কথা বলছে, তবে শিক্ষকরা দাবি করছেন, তাদের বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত যথেষ্ট নয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার জানান, কনসালটেশন কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে এবং নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা চার বছর পর ১১তম গ্রেডে যাবেন। তবে শিক্ষক নেতারা বলছেন, এসব আশ্বাস বাস্তবভিত্তিক নয় এবং তারা বারবার আলোচনা চাইলেও সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, “আমরা আর পেছনে ফিরে যাব না। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ১ কোটি ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ৬৮৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এত সংখ্যক শিক্ষার্থীর লেখাপড়া কার্যত বন্ধ থাকায় অভিভাবক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মহলে উদ্বেগ বাড়ছে।