ছুটির দিনগুলো কাটান সন্তানের সঙ্গে

লাইফস্টাইল ডেস্ক: আপনার শিশু আপনার আশেপাশে থাকাকেই কি তার সঙ্গে সময় কাটানো মনে করছেন? এমনটা ভেবে থাকলে ভুল করেছন। একসঙ্গে ভালো সময় কাটানো সব সম্পর্কের ক্ষেত্রেই জরুরি, কিন্তু শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য এটি অপরিহার্য। ছুটির দিনগুলো এজন্য আদর্শ সময়। ছুটির দিনগুলো হলো পরিবারের সদস্যদের একত্রিত হওয়ার এবং সম্পর্ক আরও গাঢ় করার সুবর্ণ সুযোগ। গবেষণা এবং মনোবিজ্ঞানীদের মতে, সন্তানের সঙ্গে গুণগত সময় কাটানো তাদের আত্মবিশ্বাস, সামাজিক দক্ষতা এবং শিক্ষাগত সাফল্য ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে নিয়মিত ভালো সময় কাটায়, তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস এবং সামাজিক দক্ষতা বেশি বিকশিত হয়। গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সপ্তাহে অন্তত ৫-৭ ঘণ্টা বাবা-মায়ের সঙ্গে গুণগত সময় কাটানো শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং তাদের মধ্যে উদ্বেগ ও হতাশার মাত্রা কমে যায়। ইউনিসেফের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে ইতিবাচক অভিজ্ঞতা শিশুর মস্তিষ্কের স্নায়বিক সংযোগ শক্তিশালী করে, যা ভবিষ্যতে তাদের বিভিন্ন সম্পর্ক তৈরিতে সহায়ক হয়। মনোবিজ্ঞানী ড. জন গটম্যানের মতে, সন্তানের সঙ্গে গুণগত সময় কাটানোর অর্থ শুধু শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকা নয়, বরং সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া। তিনি বলেন, সন্তানের সঙ্গে সময় কাটানোর সময় ফোন, টেলিভিশন বা অন্যান্য বিক্ষেপ এড়িয়ে চলা উচিত। এটি শিশুকে বোঝায় যে তারা গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের অনুভূতি ও চিন্তাভাবনা মূল্যবান।’ একইভাবে শিশু মনোবিজ্ঞানী ড. টিনা পেইন্টন ব্রিসনের মতে, ছুটির দিনগুলো সন্তানের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য আদর্শ সময়। তিনি বলেন, এই সময়ে আপনি সন্তানের সঙ্গে খেলাধুলা, গল্প বলা বা প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানোর মাধ্যমে তাদের আবেগিক বন্ধন শক্তিশালী করতে পারেন। এটি তাদের মধ্যে নিরাপত্তা বোধ তৈরি করে এবং ভবিষ্যতে তারা যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আত্মবিশ্বাসী হয়।
কীভাবে সময় কাটাবেন
১. গল্প বলা ও শোনা: সন্তানের সঙ্গে গল্প বলা বা তাদের গল্প শোনা তাদের কল্পনাশক্তি ও ভাষা দক্ষতা বিকাশে সাহায্য করে। এটি তাদের আবেগ প্রকাশের একটি মাধ্যম।
২. খেলাধুলা: বাইরে বা ঘরে খেলাধুলা সন্তানের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক। এটি তাদের মধ্যে দলগত কাজের মনোভাব গড়ে তোলে।
৩. প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানো: পার্কে ঘুরতে যাওয়া, বাগান করা বা পিকনিকের মতো কর্মকাণ্ড সন্তানের মানসিক প্রশান্তি আনে এবং তাদের প্রকৃতির সঙ্গে পরিচিত করে।
৪. শিল্প ও সৃজনশীল কাজ: ছবি আঁকা, গান গাওয়া বা হস্তশিল্পের মতো কাজ সন্তানের সৃজনশীলতা বাড়ায় এবং তাদের মধ্যে ধৈর্য ও মনোযোগের বিকাশ ঘটায়।
ছুটির দিনগুলো শুধু বিশ্রামের নয়, সন্তানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার এবং তাদের বিকাশে সহায়তা করার একটি সুযোগ। তাই, ছুটিতে ফোন, টেলিভিশন বা কাজের চাপ পাশ কাটিয়ে সন্তানের সঙ্গে সময় কাটান। তাদের হাসি, তাদের কথা, তাদের স্বপ্ন গুরুত্ব দিন। কারণ, আজকের এই সময়ই আগামী দিনের সুস্থ, সুখী ও আত্মবিশ্বাসী প্রজন্ম গড়ে তুলবে।

নিউজটি আপনার স্যোসাল নেটওয়ার্কে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *