অর্থনীতি ডেস্ক: বাংলাদেশি রফতানি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে বছরে গড়ে রফতানি হয় সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এর প্রায় পুরোটাই তৈরি পোশাক। দেশটির বাজারে শুধু পোশাক রফতানি হয় সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের মতো।
বাংলাদেশের পণ্য রফতানিতে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতদিন ১৫ শতাংশ শুল্ক দিলেও এখন দিতে হবে প্রায় আড়াই গুণ বেশি। ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এ বাড়তি শুল্কের দায় চাপিয়ে দিতে পারে উদ্যোক্তাদের ওপর। যা অনেকের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, প্রথমে যে ধাক্কাটা আসবে, তা হয়তো অনেক ফ্যাক্টরি নিতে পারবে না। দাম কমাতে বলবে, কিন্তু দাম কমিয়ে কাজ করলে তার ফ্যাক্টরি লোকসানে চলে যাবে। ফলে কিছু কিছু ফ্যাক্টরি আসলে প্রথম ধাক্কাতে বন্ধ হয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, মনে রাখা দরকার আমরা যে ধরনের পণ্য রফতানি করে থাকি এগুলো তাদের স্বল্প আয় বা মধ্যম আয়ের মানুষজনই কিনে থাকেন। সুতরাং উচ্চমূল্যের কারণে ওখানে যদি মূল্যস্ফীতি হয় বা কর্মসংস্থানে যদি সেখানে কোনো ধরনের প্রভাব পড়ে, তার কারণে যদি ভোক্তারা কম কেনেন তাহলে কিন্তু আমাদের ওপরে তূলনামূলকভাবে বেশি প্রভাব পড়বে। আমাদের এই জায়গাটিতে বিকল্প পণ্যে সুইচ করার সুযোগ নেই।
বাণিজ্য ঘাটতি বিবেচনায় বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন, যা যৌক্তিক নয় বলে মনে করেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। দেশটির প্রধান প্রধান রফতানি পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক নেই। বিষয়টি তুলে ধরে মার্কিন প্রশাসনের সাথে আলোচনার পরামর্শ তাদের।
ফজলে শামীম এহসান বলেন, আমাদের এখানে তাদের যে প্রধান পণ্য আমদানি হচ্ছে তাতে কিন্তু শুল্কের হার শূন্য। তাদের ব্যবসায় ক্ষতিকর কোনো কিছু হচ্ছে না। ফলে এই জিনিসটা আমাদের এখন ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে জড়িতদের বুঝানো দরকার।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে গবেষকদের সাথে আলাপ-আলোচনা করা, তারা তাদের মেথডোলজি কীভাবে ক্যালকুলেশন করেছেন এবং সেটির ভিত্তিতে রিক্যালকুলেট করে দেখা। আমাদের এখানে এমএফএন রেটেও ৭৪ শতাংশ হওয়ার কথা না। আর ইফেক্টিভ রেট তো অনেক কম। কেননা, আমাদের রফতানিমূখী শিল্প যেগুলো ব্যবহার করে, সেগুলোতে কিন্তু শূন্য শুল্ক পায়।
সংকট কাটিয়ে উঠতে এবং প্রধান বাজারের ওপর নির্ভরতা কমাতে বিকল্প বাজার খোজার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিকল্প বাজারের বিষয়টি সবসময় ছিল। এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে। একদিক থেকে বাংলাদেশের এলডিসি গ্র্যাজুয়েট রিলেটেড উদ্যোগ নেয়ার শুরুর সূত্রপাত হচ্ছে এই ঘটনার মাধ্যমে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এখন এমএফএন রেট বা উচ্চ শুল্কারোপের কারণে বাধ্য হয়েই এখন ট্যারিফের বিকল্প বা ট্যারিফের ভেতরে কীভাবে আমরা নেগোশিয়েট করতে পারি, সেই জিনিসগুলোর কিন্তু এখন উদ্যোগ না নেয়ার কোনো সুযোগ নাই।
বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পোশাক শিল্পের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি বলেও মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদরা।