পাকিস্তানে ট্রেনে সন্ত্রাসী হামলা: দীর্ঘ ৩০ ঘণ্টা পর সব যাত্রী উদ্ধার, নিহত ৩৩ সন্ত্রাসী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম বেলুচিস্তান প্রদেশে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর হাতে প্রায় ৩০ ঘণ্টা জিম্মি থাকার পর ৩৪০ জনেরও বেশি যাত্রীকে উদ্ধার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।
গত মঙ্গলবার বিকেলে বেলুচিস্তানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় একটি ট্রেনে সশস্ত্র গোষ্ঠী বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) বোমা হামলা চালায় এবং যাত্রীদের জিম্মি করে। প্রায় ৪৫০ জন যাত্রীবাহী এই ট্রেনে হামলার পরপরই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী উদ্ধার অভিযান শুরু করে।
একজন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা জানান, অভিযানে ৩৪৬ জন যাত্রীকে মুক্ত করা হয়েছে এবং অভিযানের সময় ৩৩ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২৭ জন সেনাসদস্য রয়েছেন, যারা ট্রেনে যাত্রী হিসেবে ভ্রমণ করছিলেন। তাঁরা সবাই ডিউটির বাইরে ছিলেন। অভিযানের সময় আরও এক সেনা সদস্য নিহত হন।
ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর)-এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানান, ‘অভিযানে কোনো যাত্রী আহত হননি। তবে, হামলার আগে কমপক্ষে ২১ জন যাত্রী সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন।’
তিনি আরও জানান, হামলাকারীরা আফগানিস্তানের সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল, যা অপারেশনের আঞ্চলিক ও সীমান্ত-অতিক্রমী প্রকৃতির প্রমাণ বহন করে। সন্ত্রাসীরা মহিলাদের ও শিশুদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছিল। নিরাপত্তা বাহিনীর স্নাইপাররা দ্রুত কৌশলী পদক্ষেপ নিয়ে আত্মঘাতী সন্ত্রাসীদের নির্মূল করে।
জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ৪০০-এরও বেশি যাত্রী নিয়ে কোয়েটা থেকে পেশোয়ার যাচ্ছিল। বেলুচিস্তানের বোলান জেলার ঢাদার এলাকায় হামলার পর সেখানকার মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন থাকায় উদ্ধার কাজে কিছুটা বিলম্ব ঘটে। হামলার পর পেশোয়ার ও কোয়েটা থেকে ট্রেন চলাচল স্থগিত করা হয়েছে।
এছাড়া, হামলার পর ভারতীয় এবং পাকিস্তানবিরোধী সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলো ভুয়া তথ্য ও গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে জনগণকে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এই সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তাঁরা নিরীহ যাত্রীদের ওপর হামলাকে ‘অমানবিক ও নিন্দনীয়’ বলে উল্লেখ করেছেন।
সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, এই হামলার পর নিরাপত্তা বাহিনীর কৌশলে পরিবর্তন আনা হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিহত করতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

নিউজটি আপনার স্যোসাল নেটওয়ার্কে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *