আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তুরস্কে রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে পৌঁছেছে, কারণ দেশটির অন্যতম প্রধান বিরোধী নেতা ও ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার গ্রেপ্তারের পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, যা এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় গণঅসন্তোষের রূপ নিয়েছে।
বিরোধী রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) নেতা ইমামোগলুকে ‘অপরাধমূলক সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা, ঘুষ গ্রহণ, চাঁদাবাজি, বেআইনিভাবে ব্যক্তিগত তথ্য রেকর্ড এবং টেন্ডার জালিয়াতির’ অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে তিনি এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। গ্রেপ্তারের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি লিখেছেন, “আমি কখনো মাথা নত করবো না।”
তার গ্রেপ্তারের পরপরই ইস্তাম্বুলসহ তুরস্কের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার রাতে দেশজুড়ে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট এবং জলকামান ব্যবহার করেছে।
ইমামোগলুর জনপ্রিয়তা তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইমামোগলু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন—এমন সম্ভাবনাই তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার অন্যতম কারণ। সিএইচপি ইতোমধ্যে তাকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করেছে।
তবে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এই বিক্ষোভের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “এই বিক্ষোভ শান্তি বিঘ্নিত করার জন্য এবং জনগণের মধ্যে বিভক্তি তৈরির চেষ্টা।” একই সঙ্গে তিনি বিরোধী দল সিএইচপি-কে দোষারোপ করেছেন দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য।
ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলও নজর রাখছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো একে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত হিসেবে উল্লেখ করেছে। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো বলছে, এই পরিস্থিতি ২০১৩ সালের গাজি পার্ক বিক্ষোভের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, যা এরদোয়ান সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এদিকে, সিএইচপি ও অন্যান্য বিরোধী দল ইমামোগলুর মুক্তির দাবি জানিয়েছে এবং জনগণকে রাস্তায় নামতে আহ্বান করেছে। ইতোমধ্যে দেশটির ৮১টি প্রদেশের অন্তত ৫৫টিতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
তুরস্কের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইমামোগলুর গ্রেপ্তার এরদোয়ানের শাসনের বিরুদ্ধে জনরোষ আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। জনগণের আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হলে এটি সরকারের জন্য বড় সংকট ডেকে আনতে পারে। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে বিরোধী দলের জন্য এটি নতুন একজোট হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
তুরস্কের বর্তমান পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত। সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নির্ভর করছে সরকার ও জনগণের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর।